রাজশাহীর তানোরে ব্যক্তিমালিকানা অবৈধ সেচ পাম্পের পরিত্যক্ত বোরিং (গর্তে) পড়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে বাঁচানো গেল না। এক টানা প্রায় ৩৩ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযানের পর বৃহস্পতিবার (১১ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে প্রায় ৫০ ফুট মাটির গভীর থেকে তাকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। উদ্ধারের পর তারা তাকে তানোর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিন তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাত ১০টায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তের আনুমানিক ৫০ ফুট গভীর থেকে শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা হয় রাত ৯টা ১০ মিনিটে। এর পরপরই শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত তানোর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত বুধবার থেকেই সব ধরনের সক্ষমতা দিয়ে তাকে উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে টিম। এতে সহায়তা করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকটা হতাশা দেখা দিয়েছিল।
দমকলকর্মী ও স্থানীয়রা বলছিলেন, সময় যত যাচ্ছে, শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনাও তত ক্ষীণ হচ্ছে। সাজিদের জন্য তানোর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) কোয়েল পূর্বপাড়া গ্রামে ভিড় করেছিলেন শত শত মানুষ। পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী শহর-এমনকি নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা শত শত মানুষ তার জন্য কেঁদেছেন। তাকে ফিরে পেতে করেছেন দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনা। সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম ও মা রুনা খাতুন সন্তান হারানোর গভীর ব্যথা ও শঙ্কায় পাথর হয়ে গিয়েছিলেন।
এর আগে শিশু সাজিদকে উদ্ধারে অভিযান তদারকিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় সেখানে তিনি উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতি ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, আট ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত গর্তের পাশ দিয়ে ৪৩ ফুট পর্যন্ত গভীরে খনন করে মাটি সরানো হয়েছে। এই গভীরতায়ও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়ে খননকার্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তার আগে আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। শিশু সাজিদের বাবা-মায়ের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। সবার মতামত নিয়েই খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাজিদকে উদ্ধারে দমকলের উদ্ধার অভিযান চলমান থাকবে-এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
দমকল বাহিনীর পরিচালক আরও বলেন, ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সরু গর্ত দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাওয়া শিশুর বাঁচার আশা কম। ৩৫ ফুটের পর মাটি জমে যাওয়ায় নিচে অক্সিজেন পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাই অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তিনি বলেন, তারা ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন কূপের ৩০ ফুটের নিচে মাটি ও খড় জমে গেছে। তারা ধারণা করেছিলেন, ৩০ ফুটের পর শিশুটিকে পাওয়া যাবে। কিন্তু ৪৩ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিচালক জানান, তারা জেনেছেন গভীর নলকূপের গর্তটি ৯০ ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছিল। তাই সে পর্যন্ত আমরা যেতে চাই। এজন্য এই গর্তের পাশে তিনটি এক্সকেভেটর দিয়ে গর্ত
করা হচ্ছে। এখন ১০ ফুট পরনি সঙ্গে কেটে গর্তের ভেতরে দেখা হবে। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দমকলকর্মীরা ৪৩ ফিট পর্যন্ত খননকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাতেও সাজিদের হদিস মেলেনি। ওই সময় উপস্থিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হয় খননকার্য আরও প্রশস্ত ও গভীর করা প্রয়োজন। ফলে দুপুর আড়াইটা থেকে কূপের ওপর থেকে আরও প্রশস্ত আকারে খননের কাজ শুরু করা হয়।
অন্যদিকে এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৩ ফুট মাটি সরানোর পরও শিশুর অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস আবারও খননকাজ শুরু করে। নতুনভাবে পাইপ ও সার্চ ভিশন ব্যবহার করে শিশুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালান কর্মীরা। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, শিশুটি যে কূপে পড়ে গেছে তার পাশেই এস্ককেভেটরের মাধ্যমে ৪৩ ফুট গভীর খনন করে মাটি সরানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিম খনন করা সেই গর্তে সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আরও গভীরে সুড়ঙ্গ করলে ভূমি ধসের শঙ্কায় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ বন্ধ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় শিশুটি উদ্ধারে খনন গর্তটি আরও প্রশস্ত করার। এতে হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে গন্তব্যে পৌছাতে। দিদারুল আলম আরও জানান, কূপটি প্রশস্ত করে তখন ওই গর্ত থেকেই অন্য কৌশলে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। নলকূপের ভেতরে যে কোনো জায়গায় শিশুটি আটকে রয়েছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন সাজিদের বাবা রাকিকুল ইসলাম ঢাকায় ছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। খবর পেয়ে বুধবার রাতে তিনি বাড়িতে ফেরেন। রাকিব ও রুনা খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে সাজিদ দ্বিতীয়। সাজিদের বড় ভাই সাব্বিরের বয়স আট বছর। ছোটটির বয়স চার মাস। রাকিবুল ইসলাম জানান, সাজিদের বয়স দুই বছর চার মাস। তিনি কষ্ট করেও ছেলেদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান জানান, গভীর নলকূপের জন্য কূপ খননকারী কছির উদ্দিন ঘটনার পর এলাকা ছাড়া।
এদিকে শুক্রবার সকালে শিশু সাজিদকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালে কোয়েলহাট মধ্যপাড়া এলাকায় তার বাবার বাড়ির পাশের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নেককিড়ি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ভোর থেকেই গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মসজিদের মাইক থেকে বারবার ভেসে আসে হৃদয় বিদারক ঘোষণা কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সাজিদ আর নেই। এই ঘোষণার পর থেকেই থমকে যায় গ্রামের স্বাভাবিক জীবন। কেউ মাঠে কাজ করতে যাননি, অনেক দোকানও খোলেনি। পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ, যুবক এমনকি স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে যান সাজিদের বাড়ির দিকে শেষবারের মতো নিষ্পাপ সেই মুখটি একনজর
দেখার আশায়। সকালেই জানাজার মাঠে মানুষের ঢল নামে। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার লোকজন সকলের চোখেই ছিল অশ্রু। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট দেহটি যখন মাঠে আনা হলো, তখন চারপাশে কান্নার রোল পড়ে যায়। শোকস্তব্ধ মা ছুটে যেতে চাইলে স্বজনরা তাকে ধরে রাখেন; কিন্তু কারোরই পক্ষে থামানো সম্ভব হয়নি সেই বুকফাটা কান্না। জানাজার ইমামতি করেন কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। জানাজা শেষে হাজারো মানুষ হাত তুলে দোয়া করেন সাজিদের মাগফিরাতের জন্য এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক কামনা করেন। স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে ছোট্ট কফিনটি যখন কবরের দিকে নেওয়া হয়, তখন পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে শুধু শোনা যাচ্ছিল স্বজনদের কান্নার শব্দ।
গ্রামবাসীর অনেকেই বলছিলেন, এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য তারা কখনো দেখেননি।এদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান,তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুজ্জামান ও ইউপি জামায়াতের আমির মাওঃ জুয়েল রানাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ সাজিদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন ও শিশু সাজিদের আত্তার মাগফিরাত কামনা করেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিন তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাত ১০টায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তের আনুমানিক ৫০ ফুট গভীর থেকে শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা হয় রাত ৯টা ১০ মিনিটে। এর পরপরই শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত তানোর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত বুধবার থেকেই সব ধরনের সক্ষমতা দিয়ে তাকে উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে টিম। এতে সহায়তা করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকটা হতাশা দেখা দিয়েছিল।
দমকলকর্মী ও স্থানীয়রা বলছিলেন, সময় যত যাচ্ছে, শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনাও তত ক্ষীণ হচ্ছে। সাজিদের জন্য তানোর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) কোয়েল পূর্বপাড়া গ্রামে ভিড় করেছিলেন শত শত মানুষ। পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী শহর-এমনকি নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা শত শত মানুষ তার জন্য কেঁদেছেন। তাকে ফিরে পেতে করেছেন দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনা। সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম ও মা রুনা খাতুন সন্তান হারানোর গভীর ব্যথা ও শঙ্কায় পাথর হয়ে গিয়েছিলেন।
এর আগে শিশু সাজিদকে উদ্ধারে অভিযান তদারকিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় সেখানে তিনি উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতি ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, আট ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত গর্তের পাশ দিয়ে ৪৩ ফুট পর্যন্ত গভীরে খনন করে মাটি সরানো হয়েছে। এই গভীরতায়ও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়ে খননকার্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তার আগে আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। শিশু সাজিদের বাবা-মায়ের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। সবার মতামত নিয়েই খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাজিদকে উদ্ধারে দমকলের উদ্ধার অভিযান চলমান থাকবে-এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
দমকল বাহিনীর পরিচালক আরও বলেন, ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সরু গর্ত দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাওয়া শিশুর বাঁচার আশা কম। ৩৫ ফুটের পর মাটি জমে যাওয়ায় নিচে অক্সিজেন পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাই অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তিনি বলেন, তারা ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন কূপের ৩০ ফুটের নিচে মাটি ও খড় জমে গেছে। তারা ধারণা করেছিলেন, ৩০ ফুটের পর শিশুটিকে পাওয়া যাবে। কিন্তু ৪৩ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিচালক জানান, তারা জেনেছেন গভীর নলকূপের গর্তটি ৯০ ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছিল। তাই সে পর্যন্ত আমরা যেতে চাই। এজন্য এই গর্তের পাশে তিনটি এক্সকেভেটর দিয়ে গর্ত
করা হচ্ছে। এখন ১০ ফুট পরনি সঙ্গে কেটে গর্তের ভেতরে দেখা হবে। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দমকলকর্মীরা ৪৩ ফিট পর্যন্ত খননকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু তাতেও সাজিদের হদিস মেলেনি। ওই সময় উপস্থিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হয় খননকার্য আরও প্রশস্ত ও গভীর করা প্রয়োজন। ফলে দুপুর আড়াইটা থেকে কূপের ওপর থেকে আরও প্রশস্ত আকারে খননের কাজ শুরু করা হয়।
অন্যদিকে এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৩ ফুট মাটি সরানোর পরও শিশুর অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস আবারও খননকাজ শুরু করে। নতুনভাবে পাইপ ও সার্চ ভিশন ব্যবহার করে শিশুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালান কর্মীরা। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, শিশুটি যে কূপে পড়ে গেছে তার পাশেই এস্ককেভেটরের মাধ্যমে ৪৩ ফুট গভীর খনন করে মাটি সরানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিম খনন করা সেই গর্তে সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আরও গভীরে সুড়ঙ্গ করলে ভূমি ধসের শঙ্কায় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ বন্ধ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় শিশুটি উদ্ধারে খনন গর্তটি আরও প্রশস্ত করার। এতে হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে গন্তব্যে পৌছাতে। দিদারুল আলম আরও জানান, কূপটি প্রশস্ত করে তখন ওই গর্ত থেকেই অন্য কৌশলে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। নলকূপের ভেতরে যে কোনো জায়গায় শিশুটি আটকে রয়েছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন সাজিদের বাবা রাকিকুল ইসলাম ঢাকায় ছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। খবর পেয়ে বুধবার রাতে তিনি বাড়িতে ফেরেন। রাকিব ও রুনা খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে সাজিদ দ্বিতীয়। সাজিদের বড় ভাই সাব্বিরের বয়স আট বছর। ছোটটির বয়স চার মাস। রাকিবুল ইসলাম জানান, সাজিদের বয়স দুই বছর চার মাস। তিনি কষ্ট করেও ছেলেদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান জানান, গভীর নলকূপের জন্য কূপ খননকারী কছির উদ্দিন ঘটনার পর এলাকা ছাড়া।
এদিকে শুক্রবার সকালে শিশু সাজিদকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালে কোয়েলহাট মধ্যপাড়া এলাকায় তার বাবার বাড়ির পাশের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নেককিড়ি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ভোর থেকেই গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মসজিদের মাইক থেকে বারবার ভেসে আসে হৃদয় বিদারক ঘোষণা কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সাজিদ আর নেই। এই ঘোষণার পর থেকেই থমকে যায় গ্রামের স্বাভাবিক জীবন। কেউ মাঠে কাজ করতে যাননি, অনেক দোকানও খোলেনি। পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ, যুবক এমনকি স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটে যান সাজিদের বাড়ির দিকে শেষবারের মতো নিষ্পাপ সেই মুখটি একনজর
দেখার আশায়। সকালেই জানাজার মাঠে মানুষের ঢল নামে। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার লোকজন সকলের চোখেই ছিল অশ্রু। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট দেহটি যখন মাঠে আনা হলো, তখন চারপাশে কান্নার রোল পড়ে যায়। শোকস্তব্ধ মা ছুটে যেতে চাইলে স্বজনরা তাকে ধরে রাখেন; কিন্তু কারোরই পক্ষে থামানো সম্ভব হয়নি সেই বুকফাটা কান্না। জানাজার ইমামতি করেন কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। জানাজা শেষে হাজারো মানুষ হাত তুলে দোয়া করেন সাজিদের মাগফিরাতের জন্য এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক কামনা করেন। স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে ছোট্ট কফিনটি যখন কবরের দিকে নেওয়া হয়, তখন পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে শুধু শোনা যাচ্ছিল স্বজনদের কান্নার শব্দ।
গ্রামবাসীর অনেকেই বলছিলেন, এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য তারা কখনো দেখেননি।এদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান,তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুজ্জামান ও ইউপি জামায়াতের আমির মাওঃ জুয়েল রানাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ সাজিদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন ও শিশু সাজিদের আত্তার মাগফিরাত কামনা করেন।
আলিফ হোসেন